Subscribe Us

অন্ধকারের মুখোমুখি দাঁড়ানোর সময়

 



অন্ধকারের মুখোমুখি দাঁড়ানোর সময়

আজ আমি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথা বলতে আসিনি।
আমি কারো সাথে লড়াইয়ে নেমে পড়তে আসিনি।
আমি এসেছি— কথার অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলো জ্বালতে।

কারণ আলো না জ্বললে
অন্ধকারকে অনেকে আলো ভেবে নেয়।
যখন কারো মুখে কুরআনের অবমাননা ভেসে ওঠে,
তখন কিছু মানুষ বিভ্রান্ত হয়—
“হয়তো সে ভুল বুঝিয়েছে…”
“হয়তো সে অন্য অর্থ বলতে চেয়েছে…”
“হয়তো ভুল হয়েছে…”

না।
সব ভুল ভুল নয়।
কিছু ভুল— হৃদয়ের গভীর থেকে বের হওয়া বিদ্বেষ।
আজ আমরা যে কথার সামনে দাঁড়িয়েছি,
তা কোনো ভুলের কথা নয়—
তা একটি আত্মিক বিদ্রোহের চিৎকার।

তিনি বলেছেন—
“শুধু কুরআন কিছুই না।”
“শুধু কুরআন শাসন করতে পারে না।”
“কুরআন হলো শুভংকরের ফাঁকি।”

এই তিনটি বাক্য—
তিনটি তীর নয়, তিনটি ছুরি—
যা কুরআনের বুকে নয়,
আমাদের ঈমানের বুকে গেঁথে দিতে চেয়েছে।

কুরআন কেবল একটা বই না,
এটা পৃষ্ঠার ওপর লেখা কালো কালো হরফ না—
এটা আসমানের আলো
যা বৃষ্টি হয়ে নেমেছে মানুষের উপর।

আল্লাহ বলেছেন—
“এটি আমি নাযিল করেছি— মানুষের পথ দেখানোর জন্য।”
“এটি সন্দেহহীন গ্রন্থ।”
“এটি হেদায়াত।”
“এটি মহান, পরাক্রমশালী আল্লাহর বাণী।”

আর একজন মানুষ
এই গ্রন্থকে বলছে—
“কিছুই না।”
কেউ যখন আল্লাহর বাণীকে “কিছুই না” বলে—
তখন সে সাজানো বাক্য বলেনা।
সে নিজের আত্মার মৃত্যু ঘোষণা করে।

যে গ্রন্থের জন্য
হাজারো সাহাবী জান দিয়ে দিয়েছে,
যে গ্রন্থের প্রতিটি অক্ষরের জন্য
নবী দাঁড়িয়ে কেঁদেছেন,
যে গ্রন্থকে পেয়ে
সালামুন আলা মুহাম্মদ  আনন্দে কাঁদতেন—
সেই গ্রন্থকে একজন মানুষ
মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলে—
কিছুই না।

এটা কেবল অহংকার নয়—
এটা আসমানের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা।

যখন তিনি বললেন—
“শুধু কুরআন শাসন করতে পারে না”—
তখন আমি অবাক হয়ে গেছি। এই লোক বলছে কি?
আসলে যে ব্যাক্তি অন্ধ,
তার কাছে আলোও অন্ধকার।

কিন্তু ইতিহাস বলে—
এমন বাক্য ফেরাউনও কখনো বলেনি।
হামান, নমরুদ, আবু জাহল, কেউ এমন কথা বলতে পারেনি-
ফেরাউন বলেছিল—
“আমি বড়।”
কিন্তু সে বলেনি—
“আল্লাহর বাণী শাসন করতে পারে না।”

কোরাইশের কাফিররাও বলেনি—
“কুরআন শাসন করতে অক্ষম।”
তারা বলেছিল—
“আমরা মানি না।”
কিন্তু তারা কখনো বলেনি
কুরআন পারবে না।

একজন মুসলিমের পোশাকে
এমন কথা… এটা ইমানের নয়—
এটা কুফ্ফারদের ভাষা।

আল্লাহ বলেন—
إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ
“শাসন কেবল আল্লাহর।”
আর তার বাণী— যে কুরআন—
সেটি যদি শাসন করতে না পারে,
তাহলে আল্লাহর শাসন কোথায়?

যে বলে—
“কুরআন পারে না”— আসলে সে বলে—
“আল্লাহ পারে না।”
এটি সাধারণ কথা নয়।
এটি ঈমানের শিকর কেটে দেয়।

যখন তিনি বললেন—
“কুরআন শুভংকরের ফাঁকি”—
আমি থেমে গেলাম। কন্ঠ স্তব্ধ হয়ে গেল।
শরীরের রক্ত যেন হিম হতে লাগলো।
ভাবলাম—
এমন কথা কি মানুষের মুখে আসতে পারে?
নাকি এটি জাহালতের ভাষা?

“শুভংকর” মানে হল সাজানো,
ভালো দেখানোর অভিনয়।
“ফাঁকি” মানে হল প্রতারণা।

অর্থাৎ তিনি বলেছেন—
“কুরআন একটি সাজানো প্রতারণা।”

এই কথাটার ওজন জানেন?
এই কথাটি পাহাড়ের উপরে দিলে
পাহাড় ভেঙে পড়বে।
পাথরের উপর দিলে, পাথর চুর্ণ হয়ে যাবে।

একজন মানুষ
আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে
এমন মন্তব্য করে—
তার হৃদয় কি জীবিত থাকতে পারে?

এটি কেবল ভুল না, এটি কেবল
মুর্খতা না—
এটা সরাসরি আল্লাহর কিতাবের অবমাননা,
এটা কুরআনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।

এমন কথা কেউ বলতে পারে না
যার অন্তরে একটুও ইমান আছে।
এটা বলতে পারে, সেই ব্যাক্তি
যে—
• কুরআনের শুনলে আনন্দ পায় না,
• কুরআনের আয়াত বিশ্বাস করেনা,
• কুরআনের শব্দ শুনলে কষ্ট।

কুরআন বলে—
“কারো কারো বুকে কুরআনের প্রতি রোগ রয়েছে।”
হয়তো তার বুকেও সেই রোগ—
যা কুরআন দেখলে জ্বালা করে,
যা আল্লাহর বাণী শুনলে কষ্ট পায়।
কারণ আল্লাহর কথা
আল্লাহর শত্রুদের কাছে বিষের মতো লাগে।

এটাই সবচেয়ে ভয়ংকর দিমুখি আচরণ।
একজন ব্যক্তি—
দাড়ি রাখে,
কুরআনের আয়াত পড়ে,
পীর গিরীও করে
ইসলামী রাজনীতিতে কাজ করে,
“কুরআনের শাসন আনব” বলে প্রচার করে—
কিন্তু ঐ একই মুখে বলে—
“কুরআন শাসন করতে পারে না।”

এটি দ্বিমুখী চরিত্র।
এটি মুনাফিকীর শুরু।
এটি মুখোশের নিচে লুকানো আসল মুখ।

এমন মানুষ
আল্লাহর দলে নয়—
শয়তানের দলে থাকে।
ইসলামের নামে কথা বলে—
কিন্তু নিজের অহংকারের সেবা করে।

এই আচরণ—
“ঈমান” শব্দটির সাথে যায় না।

আমি কাউকে “কাফির” বলছি না—
এটা আল্লাহর জ্ঞান। মানুষ জানতে পারেনা।
কেউ কারো অন্তর জানে না।

কিন্তু আমি আজ যে তিনটি বাক্যের দিকে তাকিয়েছি—
সেগুলো ঈমানকে ভেঙে দেওয়ার মতো শক্তিশালী বিদ্রোহ।

যেমন—
১) “কুরআন কিছুই না”—
→ এটি আল্লাহর বাণী অস্বীকারের ইঙ্গিত।

২) “কুরআন শাসন করতে পারে না”—
→ এটি আল্লাহর শাসনের ক্ষমতা অস্বীকার।

৩) “কুরআন শুভংকরের ফাঁকি”—
→ এটি কুরআনের প্রতি বিদ্বেষ ও অপমান।

এই তিনটি বাক্য— শুধু ভুল নয়,
এগুলো এমন ভুল যার বিপরীতে
ঈমান কেঁপে ওঠে।
আসমান থেমে যায়।
রহমতের দরজা কাঁপতে থাকে।

এগুলো সাধারণ ভুল নয়—
এগুলো “ঈমানের সীমানার” সাথে ধাক্কা।
এগুলো মানুষকে ঈমানের বাইরে ঠেলে দেয়-
যদি আল্লাহ দয়া না করেন।

যে বলে কুরআন কিছুই না—
তার সামনে আমরা বলব—
“এই কুরআনই একমাত্র আলো যা অন্ধকার দুর করতে পারে।”
“এই কুরআনই মৃত হৃদয়কে জীবিত করে।”
"এই কুরআনই মানবতার হিদায়াত,
“এই কুরআনই সমগ্র মানবতার জন্য আলো।”

“এই কুরআন আল্লাহর বাণী—
আসমানের সিদ্ধান্ত।”
আল্লাহ বলেন—
"যদি আমি এই কুরআন একটি পর্বতে নাযিল করতাম,
তুমি দেখতে—
পর্বত ভয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যেত।”

আর একজন মানুষ বলে—
“এটি কিছুই না।”
এমন মানুষ
ইমানদার হতে পারে না,

ইতিহাস প্রমাণ করেছে—
• যারা কুরআনকে ব্যঙ্গ করেছে—
তাদের নাম পৃথিবী সংরক্ষণ করেনি।
• যারা কুরআনকে তুচ্ছ করেছে—
তারা নিজেদেরই পতন ডেকে এনেছে।
• যারা কুরআনকে “ফাঁকি” বলেছে—
তারা নিজেরাই ফাঁকির মধ্যে পরেছে।

কুরআন আসমান থেকে এসেছে—
মানুষের তুচ্ছ কথায় তার সম্মান কমে না।

একজন মানুষ
কুরআনকে অস্বীকার করলে—
কুরআন ছোট হয় না, মানুষটাই ছোট হয়ে যায়।

কুরআন ফাঁকি না—
ফাঁকি হলো সেই হৃদয়
যেখানে আলো ঢোকে না।

কুরআন কিছুই না—
এটা বলে যে,
সে-ই আসলে নিজেই কিছুনা।

কুরআন শাসন করতে পারে না—
এটা বলে সেই ব্যাক্তি,
যে নিজের নফসকে শাসন করতে পারে না।

কুরআন শুভংকর না—
শুভংকর হলো তার সেই মুখ
যেখানে ঈমানের আলো নেই।

কুরআনের সামনে যে মাথা নত করে,
সেই মানুষ বড় হয়—
আর যে মাথা তুলে বিদ্রোহ করে,
সে নিজের কবর নিজেই খুঁড়ে।

কুরআনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো-
এটা মানুষের সাহস হতে পারেনা—
এই সাহস হতে পারে শয়তানের।

আর মনে রেখো—
কুরআনের কারো প্রয়োজন নেই—
মানুষের প্রয়োজন কুরআনের।
কুরআন বাঁচে না মানুষের কারণে—
মানুষ বাঁচে কুরআনের কারণে।

কুরআনে আলো আছে—
আর যে আলোকে অন্ধকার বলে—
তার চোখ নষ্ট, তার নয়ন অচল,
তার হৃদয়ে ক্যান্সার।

আজ আমি কাউকে কাফির বলিনি—
কারণ সেটি আল্লাহর কাজ।
কিন্তু আমি সত্য বলেছি—
যাতে মানুষ বুঝে—

এমন কথা ঈমানদারদের মুখে আসে না।
এমন কথা ইসলামের সন্তানদের মুখে আসে না।
এমন কথা সত্য পথের পথিকদের কথার মতো নয়।
এটি বিদ্বেষের ভাষা— অহংকারের ভাষা—
অন্ধকারের ভাষা- জাহালতের ভাষা।

আজকার বক্তব্যের লক্ষ্য একজন মানুষ নয়—
লক্ষ্য:
কুরআনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা রক্ষা করা।
এবং কুরআনের নামে বিদ্রোহীদের মুখোশ উন্মোচন করা।

আল্লাহ আমাদের হিদায়াত দিন।
হৃদয়কে আলোকিত করুন।
কুরআনের প্রেমে ডুবিয়ে দিন।
আর এমন অন্ধকার থেকে দূরে রাখুন—
যেখানে মানুষ দাঁড়িয়ে বলে—
“কুরআন কিছুই না।”

Post a Comment

0 Comments