সমাজে সততা ও ইমানের গুরুত্ব
লিখকঃ মাহাতাব আকন্দ
বন্ধুগণ,
জীবন নামের এই দীর্ঘ রাস্তায় সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাটা টাকা দিয়ে নয়— বরং সততা দিয়ে।
মানুষ ভাবে টাকা তাকে বাঁচাবে
জীবন সুন্দর করবে,
কিন্তু না। মানুষের জিবন সুন্দর হয় সততায়,
মানুষের সফলতা আসে সত্যে,
তোমাকে প্রশ্ন করি- তুমি কি সত্যবাদি? নাকি সত্য মিথ্যা মিশিয়ে ফেলেছ?
তুমি হয়তো নিজেকে সফল ভাবছ,
কিন্তু কুরআন বলে—
“وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ”
— সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিও না (সূরা বাকারা ২:৪২)।
আর আজকের সমাজে এই আয়াতটাই সবচেয়ে বেশি হারিয়ে গেছে।
আমরা ব্যাংকে যাই, বাজারে যাই, ব্যবসায় যাই—
কিন্তু আমাদের হৃদয় কি সত্যের দিকে যায়?
আমরা কি সত্যের সাথে আছি?
বন্ধুগণ,
কুরআন আবার বলে—
“وَيْلٌ لِلْمُطَفِّفِينَ”
— ধ্বংস তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয় (সূরা মুতাফফিফীন ৮৩:১)।
এই আয়াত যেন আজকের ব্যবসার প্রতিটি টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে।
যেখানে একটু বেশি লাভের লোভে
মানুষের মুখের হাসি কেড়ে নেওয়া হয়।
চাউলের বস্তায় ইটের টুকরো,
মাছের সাথে পানি মিশানো,
দামের সাথে প্রতারণা,
বিলের ফাইল ঘুরিয়ে দেওয়া—
এসব দেখে মনে হয় আয়াতগুলো তোমরা পড়ছ—
কিন্তু জীবনে ঢুকতে দেও না।
চরীত্রে ঢুকতে দেওনা।
বন্ধুগণ,
ইমান শুধু কপালে দাগ করা নয়,
ইমান হলো মানুষকে না ঠকানো, প্রতারণা না করা, ধোকা না দেয়া, মিথ্যা না বলা ।
কারণ আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেছেন—
“إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ”
— আল্লাহ সৎকর্মকারীদের ভালোবাসেন (সূরা বাকারা ২:১৯৫)।
এখন প্রশ্ন— আমরা কি সত্যিই আল্লাহর ভালোবাসা চাই?
নাকি কাগজের টাকার দিকে তাকিয়ে
ইমান হারিয়ে অন্ধ হয়ে গেছি?
নিজেদের হৃদয় অন্ধ করে ফেলেছি?
---
বন্ধুগণ,
নবীজি বলেছেন—
“সৎ ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিনে নবী, শহীদ ও সিদ্দীকদের সাথে থাকবে।”
কিন্তু আজ—
ব্যবসায় সততা যেন বিরল রোগ।
ব্যবসার চেয়ারে বসেই মানুষ ভাবে—
“আজ কতটুকু প্রতারণা করা যাবে?”
লোকসান বাঁচাতে গিয়ে অনেকে ভুলে যায়—
হিসাব দিবসের লস— এই দুনিয়ার লসের চেয়ে ভয়ঙ্কর।
বন্ধুগণ,
কুরআন বলে—
“إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا”
— আল্লাহ তোমাদের ওপর নজরদার (সূরা নিসা ৪:১)।
ব্যাংকের ক্যামেরা দেখে আমরা ভয় পাই,
কিন্তু আল্লাহর ক্যামেরা—
যা প্রতি সেকেন্ডে রেকর্ড করছে—
তা আমাদের ভয় দেখাতে পারে না!
এটাই ইমানের দুর্বলতা।
এটাই আমাদের সমাজের আসল রোগ।
বন্ধুগণ,
ব্যাংকে গিয়ে কেউ জাল কাগজ জমা দেয়,
ফাইলের ভেতর ঘুষ ঢোকায়,
চাকরি নিতে গিয়ে মিথ্যা নম্বর দেয়,
লেনদেনে শপথ ভেঙে ফেলে—
এরা কেউ বুঝতে চায় না—
কুরআন মিথ্যুকের মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।
আল্লাহ বলেন—
“لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ”
— অভিশাপ মিথ্যাবাদীদের ওপর
(সূরা আল-বাকারা ২:৮৯)।
অভিশাপ—
এটা কোনো ছোট কথা নয়।
বন্ধুগণ,
ঘরে মোটা মোটা ইসলামিক বই রাখছ, কুরআন রাখছ,
কিন্তু দোকানে কুরআনের নিতি কই , অফিসে কই, ব্যাংকে কই—
একবারো ভেবে দেখি না।
এ যেন কুরআনের আয়াতগুলো তাকের ওপর সাজানো—
আর মনের ভেতরটা ময়লায় ঢাকা!
আল্লাহ বলেন—
“كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ”
— যা বলো তা না করা আল্লাহর নিকট বড় ঘৃণার বিষয় (সূরা সাফ ৬১:৩)।
আমরা পড়ি, বলি, শুনাই—
কিন্তু জিবন চালাই না।
বন্ধুগণ,
একজন লোক ব্যাংকে বসে আছে।
কাগজ নিল, ঘুষ নিল, আবার মুচকি হাসল।
ভাবল—‘ছোট ব্যাপার’।
কিন্তু কুরআন বলছে—
“فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَه، وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَه”—
যে অণু পরিমাণ ভালো করবে তা দেখবে, আর যে অণু পরিমাণ মন্দ করবে তাও দেখবে (সূরা যিলযাল ৯৯:৭–৮)।
তুমি ভাবলে ছোট—
আল্লাহ বললেন বড়।
বন্ধুগণ,
ব্যবসা শুধু টাকা নয়—
ব্যবসা হলো আমানত।
মানুষের আস্থা তোমার হাতে।
মানুষের বিশ্বাশ তোমার হাতে।
আর আল্লাহ শিখিয়েছেন—
“إِنَّ اللّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤدُّواْ الأمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا”
— আমানত আমানতের হকদারকে পৌঁছে দাও (সূরা নিসা ৪:৫৮)।
এ আয়াত ব্যবসায়ীদের গলায় ঝোলানো উচিত।
কিন্তু আজ অনেকের গলায় ঝোলে—
লোভের মালা।
বন্ধুগণ,
মজার ব্যাপার হলো—
আমরা দুনিয়ার লজ্জা ভয় পাই,
‘লোক কি বলবে’ ভয় পাই—
কিন্তু আল্লাহর সামনে লজ্জা পাওয়ার অনুভূতিটাই নেই।
এ যেন আমাদের হৃদয়ের ভেতর
দুটি দরজা—
যেটা মানুষের দিকে, সেটা খোলা
আর যেটা আখিরাতের দিকে সেটা বন্ধ।
বন্ধুগণ,
কুরআন সততার ওপর এত গুরুত্ব দিয়েছে যে
প্রায় প্রতিটি বড় বিষয়ের সাথে সততার ছায়া দেখা যায়।
যেমন—
“يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ” —
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সাথে থেকো
(সূরা তাওবা ৯:১১৯)।
এ আয়াত যেন ঘোষণা করছে—
সত্য কথা বলা কোন বিকল্প বিষয় নয়;
এটা ইমানের শর্ত।
বন্ধুগণ,
আজকের সমাজে রিয়া অর্থাত লোক দেখানো ভালো কাজ —প্রতারণা—মিথ্যার মহামারী ছড়িয়ে গেছে।
মানুষ ভিডিও বানায় ‘ইসলাম ইসলাম’ বলে,
কিন্তু আচরণে ইসলাম নেই।
রিয়া শুধু নামাজে নয়—
ব্যবসায়ও হয়,
দানের সময়ও হয়,
মানুষকে দেখানোর চেষ্টা—
এটাই রিয়া।
আর আল্লাহ সতর্ক করে বলেন—
“وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُم بِاللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشْرِكُونَ” —
অনেকেই আল্লাহকে মানে, কিন্তু তার সাথে শিরক করে। (সূরা ইউসুফ ১২:১০৬)।
রিয়া—গোপন শিরক।
আমরা বুঝতেই চাই না।
বন্ধুগণ,
লেনদেনের জায়গায় মিথ্যা শপথ,
ফরমে মিথ্যা তথ্য, সার্ভিসে প্রতারণা—
এসব সমাজে আগুনের মতো ছড়িয়ে গেছে।
কিন্তু কুরআন বলে—
“إِنَّ اللّهَ لا يُحِبُّ الْخَائِنِينَ”
— আল্লাহ বিশ্বাস ভঙ্গকারীদের ভালোবাসেন না (সূরা আনফাল ৮:৫৮)।
এ এক ঘোষণা—
আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাইলে
প্রতারণা ছাড়তেই হবে।
বন্ধুগণ,
আজকাল মানুষের মনে ভয় নেই।
কিন্তু কুরআন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—
“يَوْمَ لَا يَنفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ” —
যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান কাউকে উপকার করবে না। (সূরা শু’আরা ২৬:৮৮)।
যে টাকা প্রতারণায় জমালেন—
সেদিন এক টাকাও কাজে লাগবে না।
সেদিন কাজে লাগবে শুধু—
সততা, ন্যায়, সত্য, ইমান।
বন্ধুগণ,
অনেকে বলে—
“এভাবে সৎ থাকলে তো ব্যবসা চলবে না!”
কিন্তু কুরআন বলে—
“وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا” —
যে আল্লাহকে ভয় করে, তার জন্য আল্লাহ সবসময়ই পথ খুলে দেন
(সূরা তালাক ৬৫:২)।
অর্থাৎ—
সততা ব্যবসা ডুবায় না—
বরং আল্লাহর বরকত এনে দেয়।
বন্ধুগণ,
আমি আজ আপনাদের সামনে শপথ করে বলছি—
সমাজে সব ধরনের উন্নতি সম্ভব,
কিন্তু সততা ছাড়া কোনো উন্নতি টিকে না।
ইমান ছাড়া কোনো কাঠামো দাঁড়ায় না।
সত্য ছাড়া কোনো জাতি টিকে না।
এজন্য কুরআন শুধু শাসন দেয়নি—
শিখিয়েছে, উদ্বুদ্ধ করেছে, চ্যালেঞ্জ করেছে।
বন্ধুগণ,
সততা মানে শুধু মিথ্যা না বলা নয়—
সততা মানে—
• ব্যবসায় মাপে ঠিক রাখা
• লেনদেনে প্রতারণা না করা
• ঘুষ এড়িয়ে চলা
• দামের অপব্যবহার না করা
• রেকর্ডে সত্য তুলে ধরা
• কর্মচারী শোষণ না করা
• লাভের লোভে অসৎ পথে না যাওয়া
এগুলো না থাকলে—
সমাজ ভেঙে পড়ে।
পরিবার ভেঙে পড়ে।
ইমান ভেঙে পড়ে।
বন্ধুগণ,
একজন সত্যবাদী এবং একজন প্রতারক—
দুজনই নামাজ পড়তে পারে।
কিন্তু আল্লাহর কাছে সত্যবাদি বেশি প্রিয়?
নিশ্চয়ই সততার ওপর দাঁড়ানো মানুষকে আল্লাহ ভালোবাসেন।
কারণ কুরআন বলে—
“إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ”—
সালাত অশ্লীলতা ও অন্যায় থেকে বিরত রাখে। (সূরা আনকাবুত ২৯:৪৫)।
যদি নামাজ তোমাকে মিথ্যা থেকে না ফেরায়,
তবে তোমার নামাজ কোরানে বর্ণিত সালাত নয়।
বন্ধুগণ,
সততা শুধু ইসলামের দাবি নয়—
এটা মানবতার দাবি।
কুরআন তাই বহুবার সততার কথা বলেছেন—
কারণ সমাজের ভিত্তি টাকা নয়—
সমাজের ভিত্তি বিশ্বাস।
বিশ্বাস ভেঙে গেলে— ঘর ভাঙে,
বন্ধুত্ব ভাঙে, রাষ্ট্র ভাঙে।
কিন্তু সততা—
সবকিছু আবার গড়ে তোলে।
বন্ধুগণ,
আজকের এই সমাজ—
ব্যাংক, বাজার, ব্যবসা, লেনদেন—
সবই যেন লোভের দুনিয়া।
কিন্তু আসুন মনে রাখি—
যে মন লোভ সামলাতে পারে না, সে ইমান সামলাতেও পারে না।
আল্লাহ বলেন—
“وَمَن بَخِلَ فَإِنَّمَا يَبْخَلُ عَن نَّفْسِهِ” —
যে কৃপণতা করে, সে নিজেরই ক্ষতি করে
(সূরা মুহাম্মদ ৪৭:৩৮)।
লোভ— মানুষের নিজের বিরুদ্ধে নিজের যুদ্ধ।
বন্ধুগণ,
আমরা যদি সমাজ বদলাতে চাই—
একটা জায়গা থেকে শুরু করতে হবে—
নিজের হৃদয় থেকে।
সততার আগুন আগে নিজের ভেতর ধরাতে হবে।
ইমানকে শুধু নামাজে নয়—
লেনদেনে নামাতে হবে।
তাহলেই সমাজ বদলাবে।
বন্ধুগণ,
শেষে বলি—
সততা এমন একটি আলো—
যা একবার কারো হৃদয়ে জ্বলে উঠলে
তার জীবনও জ্বলে ওঠে,
ব্যবসাও জ্বলে ওঠে,
সমাজও জ্বলে ওঠে।
কুরআন তাই ঘোষণা দেয়—
“وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ” —
আল্লাহ তাকওয়াবানদের ভালোবাসেন
(সূরা আলে ইমরান ৩:৭৬)।
সততা— তাকওয়ারই অংশ।
বন্ধুগণ,
চলে যাওয়া দিনের দিকে তাকান—
দেখবেন কত ভুল করেছি।
কিন্তু সামনে যে দিনগুলো আসছে—
সেগুলোর ওপর আপনার অধিকার আছে।
এসো, আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করি—
মিথ্যার ওপর নয়, সত্যের ওপর চলবো।
প্রতারণার ওপর নয়, সততার ওপর দাঁড়াবো।
রিয়ার ওপর নয়, খাঁটি ইমানের ওপর দাঁড়াবো।
কারণ— সততা হলো মানুষের সৌন্দর্য,
আর ইমান হলো মানুষের শক্তি।
লিখকঃ মাহাতাব আকন্দ
বন্ধুগণ,
জীবন নামের এই দীর্ঘ রাস্তায় সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাটা টাকা দিয়ে নয়— বরং সততা দিয়ে।
মানুষ ভাবে টাকা তাকে বাঁচাবে
জীবন সুন্দর করবে,
কিন্তু না। মানুষের জিবন সুন্দর হয় সততায়,
মানুষের সফলতা আসে সত্যে,
তোমাকে প্রশ্ন করি- তুমি কি সত্যবাদি? নাকি সত্য মিথ্যা মিশিয়ে ফেলেছ?
তুমি হয়তো নিজেকে সফল ভাবছ,
কিন্তু কুরআন বলে—
“وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ”
— সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিও না (সূরা বাকারা ২:৪২)।
আর আজকের সমাজে এই আয়াতটাই সবচেয়ে বেশি হারিয়ে গেছে।
আমরা ব্যাংকে যাই, বাজারে যাই, ব্যবসায় যাই—
কিন্তু আমাদের হৃদয় কি সত্যের দিকে যায়?
আমরা কি সত্যের সাথে আছি?
বন্ধুগণ,
কুরআন আবার বলে—
“وَيْلٌ لِلْمُطَفِّفِينَ”
— ধ্বংস তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয় (সূরা মুতাফফিফীন ৮৩:১)।
এই আয়াত যেন আজকের ব্যবসার প্রতিটি টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে।
যেখানে একটু বেশি লাভের লোভে
মানুষের মুখের হাসি কেড়ে নেওয়া হয়।
চাউলের বস্তায় ইটের টুকরো,
মাছের সাথে পানি মিশানো,
দামের সাথে প্রতারণা,
বিলের ফাইল ঘুরিয়ে দেওয়া—
এসব দেখে মনে হয় আয়াতগুলো তোমরা পড়ছ—
কিন্তু জীবনে ঢুকতে দেও না।
চরীত্রে ঢুকতে দেওনা।
বন্ধুগণ,
ইমান শুধু কপালে দাগ করা নয়,
ইমান হলো মানুষকে না ঠকানো, প্রতারণা না করা, ধোকা না দেয়া, মিথ্যা না বলা ।
কারণ আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেছেন—
“إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ”
— আল্লাহ সৎকর্মকারীদের ভালোবাসেন (সূরা বাকারা ২:১৯৫)।
এখন প্রশ্ন— আমরা কি সত্যিই আল্লাহর ভালোবাসা চাই?
নাকি কাগজের টাকার দিকে তাকিয়ে
ইমান হারিয়ে অন্ধ হয়ে গেছি?
নিজেদের হৃদয় অন্ধ করে ফেলেছি?
---
বন্ধুগণ,
নবীজি বলেছেন—
“সৎ ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিনে নবী, শহীদ ও সিদ্দীকদের সাথে থাকবে।”
কিন্তু আজ—
ব্যবসায় সততা যেন বিরল রোগ।
ব্যবসার চেয়ারে বসেই মানুষ ভাবে—
“আজ কতটুকু প্রতারণা করা যাবে?”
লোকসান বাঁচাতে গিয়ে অনেকে ভুলে যায়—
হিসাব দিবসের লস— এই দুনিয়ার লসের চেয়ে ভয়ঙ্কর।
বন্ধুগণ,
কুরআন বলে—
“إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا”
— আল্লাহ তোমাদের ওপর নজরদার (সূরা নিসা ৪:১)।
ব্যাংকের ক্যামেরা দেখে আমরা ভয় পাই,
কিন্তু আল্লাহর ক্যামেরা—
যা প্রতি সেকেন্ডে রেকর্ড করছে—
তা আমাদের ভয় দেখাতে পারে না!
এটাই ইমানের দুর্বলতা।
এটাই আমাদের সমাজের আসল রোগ।
বন্ধুগণ,
ব্যাংকে গিয়ে কেউ জাল কাগজ জমা দেয়,
ফাইলের ভেতর ঘুষ ঢোকায়,
চাকরি নিতে গিয়ে মিথ্যা নম্বর দেয়,
লেনদেনে শপথ ভেঙে ফেলে—
এরা কেউ বুঝতে চায় না—
কুরআন মিথ্যুকের মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।
আল্লাহ বলেন—
“لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ”
— অভিশাপ মিথ্যাবাদীদের ওপর
(সূরা আল-বাকারা ২:৮৯)।
অভিশাপ—
এটা কোনো ছোট কথা নয়।
বন্ধুগণ,
ঘরে মোটা মোটা ইসলামিক বই রাখছ, কুরআন রাখছ,
কিন্তু দোকানে কুরআনের নিতি কই , অফিসে কই, ব্যাংকে কই—
একবারো ভেবে দেখি না।
এ যেন কুরআনের আয়াতগুলো তাকের ওপর সাজানো—
আর মনের ভেতরটা ময়লায় ঢাকা!
আল্লাহ বলেন—
“كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ”
— যা বলো তা না করা আল্লাহর নিকট বড় ঘৃণার বিষয় (সূরা সাফ ৬১:৩)।
আমরা পড়ি, বলি, শুনাই—
কিন্তু জিবন চালাই না।
বন্ধুগণ,
একজন লোক ব্যাংকে বসে আছে।
কাগজ নিল, ঘুষ নিল, আবার মুচকি হাসল।
ভাবল—‘ছোট ব্যাপার’।
কিন্তু কুরআন বলছে—
“فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَه، وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَه”—
যে অণু পরিমাণ ভালো করবে তা দেখবে, আর যে অণু পরিমাণ মন্দ করবে তাও দেখবে (সূরা যিলযাল ৯৯:৭–৮)।
তুমি ভাবলে ছোট—
আল্লাহ বললেন বড়।
বন্ধুগণ,
ব্যবসা শুধু টাকা নয়—
ব্যবসা হলো আমানত।
মানুষের আস্থা তোমার হাতে।
মানুষের বিশ্বাশ তোমার হাতে।
আর আল্লাহ শিখিয়েছেন—
“إِنَّ اللّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤدُّواْ الأمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا”
— আমানত আমানতের হকদারকে পৌঁছে দাও (সূরা নিসা ৪:৫৮)।
এ আয়াত ব্যবসায়ীদের গলায় ঝোলানো উচিত।
কিন্তু আজ অনেকের গলায় ঝোলে—
লোভের মালা।
বন্ধুগণ,
মজার ব্যাপার হলো—
আমরা দুনিয়ার লজ্জা ভয় পাই,
‘লোক কি বলবে’ ভয় পাই—
কিন্তু আল্লাহর সামনে লজ্জা পাওয়ার অনুভূতিটাই নেই।
এ যেন আমাদের হৃদয়ের ভেতর
দুটি দরজা—
যেটা মানুষের দিকে, সেটা খোলা
আর যেটা আখিরাতের দিকে সেটা বন্ধ।
বন্ধুগণ,
কুরআন সততার ওপর এত গুরুত্ব দিয়েছে যে
প্রায় প্রতিটি বড় বিষয়ের সাথে সততার ছায়া দেখা যায়।
যেমন—
“يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ” —
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সাথে থেকো
(সূরা তাওবা ৯:১১৯)।
এ আয়াত যেন ঘোষণা করছে—
সত্য কথা বলা কোন বিকল্প বিষয় নয়;
এটা ইমানের শর্ত।
বন্ধুগণ,
আজকের সমাজে রিয়া অর্থাত লোক দেখানো ভালো কাজ —প্রতারণা—মিথ্যার মহামারী ছড়িয়ে গেছে।
মানুষ ভিডিও বানায় ‘ইসলাম ইসলাম’ বলে,
কিন্তু আচরণে ইসলাম নেই।
রিয়া শুধু নামাজে নয়—
ব্যবসায়ও হয়,
দানের সময়ও হয়,
মানুষকে দেখানোর চেষ্টা—
এটাই রিয়া।
আর আল্লাহ সতর্ক করে বলেন—
“وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُم بِاللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشْرِكُونَ” —
অনেকেই আল্লাহকে মানে, কিন্তু তার সাথে শিরক করে। (সূরা ইউসুফ ১২:১০৬)।
রিয়া—গোপন শিরক।
আমরা বুঝতেই চাই না।
বন্ধুগণ,
লেনদেনের জায়গায় মিথ্যা শপথ,
ফরমে মিথ্যা তথ্য, সার্ভিসে প্রতারণা—
এসব সমাজে আগুনের মতো ছড়িয়ে গেছে।
কিন্তু কুরআন বলে—
“إِنَّ اللّهَ لا يُحِبُّ الْخَائِنِينَ”
— আল্লাহ বিশ্বাস ভঙ্গকারীদের ভালোবাসেন না (সূরা আনফাল ৮:৫৮)।
এ এক ঘোষণা—
আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাইলে
প্রতারণা ছাড়তেই হবে।
বন্ধুগণ,
আজকাল মানুষের মনে ভয় নেই।
কিন্তু কুরআন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—
“يَوْمَ لَا يَنفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ” —
যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান কাউকে উপকার করবে না। (সূরা শু’আরা ২৬:৮৮)।
যে টাকা প্রতারণায় জমালেন—
সেদিন এক টাকাও কাজে লাগবে না।
সেদিন কাজে লাগবে শুধু—
সততা, ন্যায়, সত্য, ইমান।
বন্ধুগণ,
অনেকে বলে—
“এভাবে সৎ থাকলে তো ব্যবসা চলবে না!”
কিন্তু কুরআন বলে—
“وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا” —
যে আল্লাহকে ভয় করে, তার জন্য আল্লাহ সবসময়ই পথ খুলে দেন
(সূরা তালাক ৬৫:২)।
অর্থাৎ—
সততা ব্যবসা ডুবায় না—
বরং আল্লাহর বরকত এনে দেয়।
বন্ধুগণ,
আমি আজ আপনাদের সামনে শপথ করে বলছি—
সমাজে সব ধরনের উন্নতি সম্ভব,
কিন্তু সততা ছাড়া কোনো উন্নতি টিকে না।
ইমান ছাড়া কোনো কাঠামো দাঁড়ায় না।
সত্য ছাড়া কোনো জাতি টিকে না।
এজন্য কুরআন শুধু শাসন দেয়নি—
শিখিয়েছে, উদ্বুদ্ধ করেছে, চ্যালেঞ্জ করেছে।
বন্ধুগণ,
সততা মানে শুধু মিথ্যা না বলা নয়—
সততা মানে—
• ব্যবসায় মাপে ঠিক রাখা
• লেনদেনে প্রতারণা না করা
• ঘুষ এড়িয়ে চলা
• দামের অপব্যবহার না করা
• রেকর্ডে সত্য তুলে ধরা
• কর্মচারী শোষণ না করা
• লাভের লোভে অসৎ পথে না যাওয়া
এগুলো না থাকলে—
সমাজ ভেঙে পড়ে।
পরিবার ভেঙে পড়ে।
ইমান ভেঙে পড়ে।
বন্ধুগণ,
একজন সত্যবাদী এবং একজন প্রতারক—
দুজনই নামাজ পড়তে পারে।
কিন্তু আল্লাহর কাছে সত্যবাদি বেশি প্রিয়?
নিশ্চয়ই সততার ওপর দাঁড়ানো মানুষকে আল্লাহ ভালোবাসেন।
কারণ কুরআন বলে—
“إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ”—
সালাত অশ্লীলতা ও অন্যায় থেকে বিরত রাখে। (সূরা আনকাবুত ২৯:৪৫)।
যদি নামাজ তোমাকে মিথ্যা থেকে না ফেরায়,
তবে তোমার নামাজ কোরানে বর্ণিত সালাত নয়।
বন্ধুগণ,
সততা শুধু ইসলামের দাবি নয়—
এটা মানবতার দাবি।
কুরআন তাই বহুবার সততার কথা বলেছেন—
কারণ সমাজের ভিত্তি টাকা নয়—
সমাজের ভিত্তি বিশ্বাস।
বিশ্বাস ভেঙে গেলে— ঘর ভাঙে,
বন্ধুত্ব ভাঙে, রাষ্ট্র ভাঙে।
কিন্তু সততা—
সবকিছু আবার গড়ে তোলে।
বন্ধুগণ,
আজকের এই সমাজ—
ব্যাংক, বাজার, ব্যবসা, লেনদেন—
সবই যেন লোভের দুনিয়া।
কিন্তু আসুন মনে রাখি—
যে মন লোভ সামলাতে পারে না, সে ইমান সামলাতেও পারে না।
আল্লাহ বলেন—
“وَمَن بَخِلَ فَإِنَّمَا يَبْخَلُ عَن نَّفْسِهِ” —
যে কৃপণতা করে, সে নিজেরই ক্ষতি করে
(সূরা মুহাম্মদ ৪৭:৩৮)।
লোভ— মানুষের নিজের বিরুদ্ধে নিজের যুদ্ধ।
বন্ধুগণ,
আমরা যদি সমাজ বদলাতে চাই—
একটা জায়গা থেকে শুরু করতে হবে—
নিজের হৃদয় থেকে।
সততার আগুন আগে নিজের ভেতর ধরাতে হবে।
ইমানকে শুধু নামাজে নয়—
লেনদেনে নামাতে হবে।
তাহলেই সমাজ বদলাবে।
বন্ধুগণ,
শেষে বলি—
সততা এমন একটি আলো—
যা একবার কারো হৃদয়ে জ্বলে উঠলে
তার জীবনও জ্বলে ওঠে,
ব্যবসাও জ্বলে ওঠে,
সমাজও জ্বলে ওঠে।
কুরআন তাই ঘোষণা দেয়—
“وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ” —
আল্লাহ তাকওয়াবানদের ভালোবাসেন
(সূরা আলে ইমরান ৩:৭৬)।
সততা— তাকওয়ারই অংশ।
বন্ধুগণ,
চলে যাওয়া দিনের দিকে তাকান—
দেখবেন কত ভুল করেছি।
কিন্তু সামনে যে দিনগুলো আসছে—
সেগুলোর ওপর আপনার অধিকার আছে।
এসো, আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করি—
মিথ্যার ওপর নয়, সত্যের ওপর চলবো।
প্রতারণার ওপর নয়, সততার ওপর দাঁড়াবো।
রিয়ার ওপর নয়, খাঁটি ইমানের ওপর দাঁড়াবো।
কারণ— সততা হলো মানুষের সৌন্দর্য,
আর ইমান হলো মানুষের শক্তি।
0 Comments