Subscribe Us

কুরআন থেকে আমাদের দূরে রেখেছে যারা

 

কুরআন থেকে আমাদের দূরে রেখেছে যারা
লিখকঃ মাহাতাব আকন্দ

আমাদের বুকে একটা কিতাব আছে —
হ্যাঁ, জি ভাই! সত্যিই আছে!
কিন্তু সে কিতাব হৃদয়ে নেই!
সে বুকে আছে, ঠোঁটে আসে,
জিব্বায় গড়ায়, মাঝে মাঝে মাথায় উঠে যায় —
তবু সে ঢোকে না অন্তরে!
আমরা তাকে ভালোবাসি না,
আমরা তাকে ভয় পাই!
যে কিতাব আমাদের মুক্তি দিতে এসেছিল,
আমরা তাকে বন্দী করে রেখেছি আলমারীতে—
রেশমে মুড়ে, কাভারে ঢেকে, ধুলোর নিচে!

বন্ধুগণ!
ওটা কেবল একটা বই না,
ওটা ছিল আমাদের জীবনের মানচিত্র,
আমাদের চেতনার নক্ষত্র,
আমাদের শিরায় রক্ত হয়ে বইবার কথা ছিল!
কিন্তু আজ তা আলমারীতে বন্দি অবস্থায় —
তার ওপরে ধুলো জমে গেছে,
আর আমাদের চোখ আঁধারে ঢেকে গেছে
আমরা সেই কিতাবের মানুষ,
তবুও সেই কিতাব আমাদের জীবনে নেই!
আমরা তাকে বহন করি,
কিন্তু সে আমাদের বহন করে না!

বন্ধুগণ!
তোমরা কি জানো সেই কিতাবের নাম?
হ্যাঁ, সেই কিতাবের নাম কুরআন!
যে কিতাব বলেছিল,
هُدًى لِّلنَّاسِ — “এটা মানবতার পথপ্রদর্শক।”
কিন্তু আমরা সেই পথপ্রদর্শককে রুমালে বেধে ফেলেছি,
মোল্লার ঘরে আটকে রেখেছি,
তাদের মুখে শুনেছি ভয়ের বাক্য—
“তুমি বুঝবে না! তুমি পারবে না! তুমি যোগ্য নও!”
আর আমরা সেই বাক্যকে ঈমান ভেবে নিয়েছি!
আমরা নিজেদের কিতাব থেকে নিজেদেরকেই তাড়িয়ে দিয়েছি!

বন্ধুগণ!
আল্লাহ বলেছিলেন,
وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ
“আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি স্মরণের জন্য।”
কিন্তু হুজুর বলল, “কঠিন!”
আল্লাহ বললেন, “চিন্তা করো!”
কিন্তু হুজুর বলল, “চিন্তা করো না!”
আল্লাহ বললেন, “পড়ো, বুঝো, মানো!”
কিন্তু হুজুর বলল, “শুধু পড়ো, মানো না, বোঝার দরকার নাই!”
বন্ধুগণ! এ কেমন বেয়াদবি!
যে কিতাব চিন্তার জন্য, তাকে তারা চিন্তাশূন্যের হাতে বন্দী করেছে!

বন্ধুগণ!
কেউ কুরআন চুরি করেনি,
আমরাই গুটিয়ে রেখেছি —
নিজেদের ভয়, নিজেদের অলসতা,
আর ধর্মব্যবসায়ীদের লোভের ভেতরে!
আমরা নিজেরাই দূরে সরে গেছি,
নিজেদের কিতাব থেকে নিজেদের নির্বাসনে পাঠিয়েছি!
আজ আমরা কুরআনের জাতি হয়েও
কুরআনহীন জাতি!
আমাদের বুকে তার অক্ষর আছে,
কিন্তু আমাদের হৃদয়ে তার আলো নেই!

বন্ধুগণ!
তোমরা কি দেখো না?
তোমাদের ঘরে সেই কিতাব পড়ে আছে —
আলমারির কোনায়, ধুলার নিচে!
ধুলোর কিতাব, ধুলোর জাতি!
আমরা সেই ধুলোর মানুষ,
যাদের আত্মা থেকে হারিয়ে গেছে আলো,
যাদের চোখে মিথ্যার প্রলেপ,
যাদের কানে সত্যের আহ্বান পৌঁছায় না!

বন্ধুগণ!
কুরআনকে আমরা সাজাই,
তেলাওয়াত করি, প্রতিযোগিতা করি,
কিন্তু সেই কিতাবের আদেশ মানি না!
আমরা তাকে পবিত্র রাখি,
কিন্তু নিজেরা অপবিত্র থাকি!
আমরা তাকে চুমু খাই,
কিন্তু তার বাণীকে হত্যা করি আমাদের কাজে,
আমাদের রাজনীতিতে,
আমাদের অন্যায়ের ব্যবস্থায়!

বন্ধুগণ!
আজ কুরআন হারায়নি —
হারিয়েছে আমাদের হৃদয়,
হারিয়েছে আমাদের সাহস,
হারিয়েছে আমাদের চিন্তা!
আমরা কুরআনকে বুকের মাঝে রেখেছি,
কিন্তু নিজেদের জীবন থেকে মুছে ফেলেছি।
আমরা কুরআনের বাহক হইনি,
আমরা ফ্রেন্ডস অফ কুরআন হইনি,
আমরা কুরআনের বন্ধু হইনি,
আমরা হয়েছি তার অন্ধ পাহারাদার!

বন্ধুগণ!
এই হলো আমাদের সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ সত্য —
কুরআন আমাদের আছে, কিন্তু আমরা কুরআনে নেই!
যে কিতাবের আলোয় আমরা পৃথিবী জ্বালাতে পারতাম,
সেই আলো আমরা নিজের হাতে নিভিয়ে দিয়েছি।
আজ আমরা অন্ধ,
অন্ধ অথচ নিজেদের আলোকিত ভাবি!
আজ আমাদের বুকে আছে কিতাব,
কিন্তু হৃদয়ে আছে শূন্যতা,
আমাদের ঠোঁটে আছে আয়াত,
কিন্তু কর্মে আছে বিদ্রোহ —
বিদ্রোহ আল্লাহর বিরুদ্ধে,
বিদ্রোহ নিজের মুক্তির বিপরীতে!

বন্ধুগণ!
প্রথমেই যারা আমাদের কুরআন থেকে সরিয়েছে,
তারা হলো ধর্মব্যবসায়ী!
হ্যাঁ, ধর্মের ব্যবসায়ী!
যাদের পেট চলে আল্লাহর নাম বিক্রি করে,
যাদের পেশা হলো ভয় দেখানো,
যাদের অফিস হলো মসজিদ,
আর মূলধন হলো মানুষের অজ্ঞতা!
তারা কুরআনকে পাঠ করেছে, কিন্তু বুঝেনি,
আর আমাদেরও বুঝতে দেয়নি।
তারা বলেছে — “আমরা বলব, তুমি শুনবে।”
আমরা বলেছি — “জী হুজুর।”
এভাবেই কুরআন বন্দি হয়েছে তাদের কণ্ঠে,
আর আমাদের বুদ্ধি হয়ে গেছে তালাবন্ধ!

বন্ধুগণ!
দ্বিতীয় শত্রু — মিথ্যা হাদীসের সাগর!
হাজার হাজার গল্প, হাজার হাজার কাহিনী,
যেগুলোর পেছনে নেই আল্লাহ, নেই সত্য,
শুধু আছে ভয় আর শাসন!
তারা বলেছে — “কুরআন বুঝতে হাদীস দরকার।”
কিন্তু কখনো বলেনি — “হাদীস বুঝতে কুরআন দরকার।”
এই এক বাক্যই আমাদের ধ্বংস করেছে!
আমরা কুরআন বাদ দিয়ে গল্প শুনেছি,
গল্প থেকে বিধান বানিয়েছি,
বিধান থেকে ধর্ম বানিয়েছি,
আর ধর্ম থেকে হারিয়েছি আল্লাহর বিধান!

বন্ধুগণ!
তৃতীয় শৃঙ্খল হলো — মাযহাব!
কেউ বলে হানাফী, কেউ বলে শাফেয়ী,
কেউ বলে আহলে হাদীস, কেউ বলে আহলে বায়ত!
কিন্তু কুরআন কি বলেছে?
না! কুরআন বলেছে — “তোমাদের নাম মুসলিম।”
আমরা সেই নাম ফেলে দিয়েছি,
আর মানুষের দেওয়া নাম তুলে নিয়েছি।
এই নামেই শুরু হয়েছে বিভাজন,
এই বিভাজনেই শেষ হয়েছে ঐক্য।
আমরা এক উম্মাহ ছিলাম,
এখন আমরা চার টুকরো জাতি!
একেই বলে শয়তানের জয়!

বন্ধুগণ!
চতুর্থ ফাঁদ হলো — রাজনীতি!
আজ ইসলামকে বানানো হয়েছে ব্যানার,
কুরআনকে বানানো হয়েছে ভোটের ভাষণ!
“আল্লাহর আইন” কথাটি লেখা হয় ব্যানারে,
কিন্তু সংসদে গৃহীত হয় মানুষের আইন।
এরা কুরআন ব্যবহার করে ক্ষমতা নিতে,
তারপর কুরআনকেই কারাগারে ঢুকিয়ে দেয়।
এই দ্বিচারিতা, এই মিথ্যাচার —
আমাদের চিন্তাকে মেরে ফেলেছে।
আমরা ভাবি ইসলাম মানে দল,
আর কুরআন মানে নীতি নয়,
কুরআন মানে বক্তৃতার স্লোগান!

বন্ধুগণ!
আরেক বড় শত্রু — ভুল অনুবাদ!
কুরআনের শব্দগুলোকে এমনভাবে কেটে ছেঁটে দিয়েছে
যেন চিন্তার দরজা বন্ধ হয়!
‘সালাত’ মানে শুধু নামাজ,
‘যাকাত’ মানে শুধু টাকা,
‘সিজদা’ মানে শুধু মাটিতে পড়া!
এভাবেই কুরআনের প্রাণ মেরে ফেলা হয়েছে।
আয়াতের গভীরতা হারিয়ে গেছে শব্দের পাথরে।
আমরা কুরআন পড়ি, কিন্তু বুঝি না,
বুঝতে চাইলে বলা হয় — “তুমি বিপদে পড়বে।”
এই ভয়ই আমাদের বেঁধে রেখেছে,
এই ভয়ই আজকের সবচেয়ে বড় কারাগার।

বন্ধুগণ!
আরও এক কারাগার হল — কুসংস্কার আর শিরক!
কেউ বলে মাজারে গেলে মাফ,
কেউ বলে দরগায় মান্নত দিলে সফলতা।
কেউ বলে আয়াত লিখে তাবিজ বানাও,
কেউ বলে ধোঁয়া দিয়ে আল্লাহর দরজা খোলো।
এ কেমন ধর্ম?
এই ধর্ম আজ ঢেকে গেছে,
শুধু মোল্লা, পীর, দরগা আর মিথ্যা গল্পে!
কুরআন এসেছে আলো দিতে,
আমরা বানিয়েছি অন্ধকারের অনুষ্ঠান।

বন্ধুগণ!
আরেকটা ভয়ঙ্কর ফাঁদ — পশ্চিমা শিক্ষা!
তারা আমাদের বলেছে —
“ধর্ম আলাদা, জীবন আলাদা।”
তারা আল্লাহকে ক্লাসের বাইরে রেখেছে।
আমরা শিখেছি নিউটন, আইনস্টাইন, গ্যালিলিও,
কিন্তু শিখিনি “আল্লাহর নিয়মই বিজ্ঞান।”
আমরা পেরেছি চাঁদে যেতে,
কিন্তু পারিনি নিজের অন্তরে যেতে।
আমরা জেনেছি মহাকাশের রহস্য,
কিন্তু হারিয়েছি আত্মার দিকনির্দেশ।
এই শিক্ষা আমাদের মস্তিষ্কে কুরআনের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।

বন্ধুগণ!
আমাদের আরবি না জানার অপরাধও কম নয়।
যে ভাষায় আল্লাহর কিতাব,
আমরা সেই ভাষা জানি না!
তাই আমাদের আল্লাহকে বুঝতে হয় দোভাষীর মাধ্যমে।
কেউ বলল — এটা মানে নামাজ,
আমরা বিশ্বাস করলাম।
কেউ বলল — এটা মানে কবর,
আমরা বিশ্বাস করলাম।
আমরা নিজের কিতাব নিজেরাই বুঝতে পারি না,
এইটাই তো দাসত্বের আরেকটি বড় রূপ!

বন্ধুগণ!
আরেক শত্রু হলো — ভয়!
ভণ্ড আলেমদের তৈরি ভয়!
তারা বলে — “কুরআন ভুল বুঝলে জাহান্নাম।”
তারা কখনো বলে না — “না বুঝে থাকলেও জাহান্নাম।”
এই ভয় আমাদের মেরে ফেলেছে।
আমরা কুরআন খুলতে ভয় পাই,
ভাবতে ভয় পাই,
প্রশ্ন করতে ভয় পাই।
কুরআন তো চিন্তার আহ্বান,
তারা একে বানিয়েছে নিষেধের দেয়াল।
কুরআন যেন আল্লাহর কিতাব নয়,
বরং তাদের বংশের সম্পত্তি!

বন্ধুগণ!
আরেকটা বড় বাধা — দুনিয়ার মোহ!
আমরা কুরআনকে সময় দেই না,
সময় দেই টাকা, চাকরি, সিনেমা, স্ক্রলিং-এ!
কুরআন ডাকে ফজরের সময়,
আমরা ঘুমে ডুবে থাকি।
কুরআন ডাকে চিন্তার জন্য,
আমরা বলি — “সময় নেই।”
এভাবেই ধীরে ধীরে কুরআন হারিয়ে যায়,
আমরা হারিয়ে যাই নিজের ভেতরে!

বন্ধুগণ!
সবশেষে একটা ভয়ানক সত্য —
আমরা জন্মসূত্রে মুসলমান, চিন্তায় নয়।
বাবা-মা মুসলমান বলে আমরা মুসলমান।
কিন্তু কুরআন জানি না, বুঝি না, মানি না।
এ কেমন মুসলমানিত্ব?
এই নামধারী ধর্মই আজ আমাদের দুর্বল করেছে।
আমরা বলি আল্লাহ এক,
কিন্তু শাসন মানি মানুষের!
আমরা বলি কুরআন সত্য,
কিন্তু জীবন চলে সংবিধান দিয়ে!
এটাই আমাদের হারিয়ে যাওয়া চেহারা।

বন্ধুগণ!
এখন সময় এসেছে জেগে ওঠার!
মাযহাবের দেয়াল ভেঙে ফেলো!
মোল্লাদের ভয় ছুড়ে ফেলো!
দলাদলির আগুন নিভিয়ে ফেলো!
আর বুকের ভেতর কুরআনের আলো জ্বালাও!
এ আলো ভয় দেয় না,
এ আলো মুক্তি দেয়।
এ আলো বলে — “চিন্তা করো!”
এ আলো বলে — “ন্যায় প্রতিষ্ঠা করো!”
এ আলো বলে — “কারো দাস হয়ো না!”

বন্ধুগণ!
আমাদের শত্রু অনেক,
কিন্তু মুক্তির পথ একটাই — কুরআন।
যে কিতাব মানুষকে মানুষ বানায়,
যে কিতাব মস্তিষ্কে আলো জ্বালায়,
যে কিতাব দাসত্ব ভাঙে,
যে কিতাব বলে — “শাসন একমাত্র আল্লাহর।”

তাই আজ শপথ নাও —
আর কোনো মধ্যস্থতাকারী নয়!
আর কোনো মাযহাব নয়!
আর কোনো ভয় নয়!
শুধু কুরআন!
শুধু আল্লাহ!
শুধু সত্য!

Post a Comment

0 Comments